শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।
বুদ্ধিজীবী কারা? প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী যারা দৈহিক শ্রমের বদলে মানসিক শ্রম বা বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রম দেন তারাই বুদ্ধিজীবী। বাংলা একাডেমী প্রকাশিত শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ গ্রন্থে বুদ্ধিজীবীদের যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা হলো, “বুদ্ধিজীবী অর্থ লেখক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, কন্ঠশিল্পী, সকল পর্যায়ের শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, রাজনীতিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী, চলচ্চিত্র ও নাটকের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সমাজসেবী ও সংস্কৃতিসেবী।”
যাহোক, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন বুঝতে পারে যে তাদের পক্ষে আর যুদ্ধে জেতা সম্ভব না, তখন তারা নবগঠিত দেশকে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে দূর্বল এবং পঙ্গু করে দেয়ার পরিকল্পনা করে।
মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের প্রস্তুতি নেয়া হতে থাকে। হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক দুই দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর রাতে তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিজ নিজ গৃহ হতে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করে।
বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা আজ পর্যন্ত গণনা করা হয়নি। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এদের মধ্যে ৯৯১ জন ছিলেন শিক্ষাবিদ, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী এবং ১৬ জন সাহিত্যিক, শিল্পী ও প্রকৌশলী।
বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে গণকবর দেওয়া হয়। গণকবরগুলো বধ্যভূমি নামে পরিচিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি খোঁজার জন্য ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ডিসেম্বর থেকে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি। সারা দেশে প্রায় ৯৪২টি বধ্যভূমি শনাক্ত করতে পেরেছেন তাঁরা।
বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা তখনই সার্থক হবে যখন বুদ্ধিজীবীদের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার মাধ্যমে আমরা একটি দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা, শোষণমুক্ত সমাজ এবং উন্নত দেশ গড়ে তুলতে পারবো।
লিখেছেনঃ
Ahasanur Haque Saikat Talukder