আপনারা যারা ৪২/৪৩ বিসিএস দিবেন বলে মন স্থির করেছেন তাদেরকে অভিনন্দন। আমি বলবো আপনারা সঠিক সিধান্তটাই নিয়েছেন। তবে বিসিএস একটা দীর্ঘময়াদী পরিক্ষা। এখানে সাফল্য পেতে মেধার সাথে ধৈর্য্যেরও পরিক্ষা দিতে হয়। আর যারা ক্যাডার হয় তাদের মেধার সাথে বিশেষ কিছু গুন বা দক্ষতাও থাকে। এই গুন বা দক্ষতা গুলো হুট করে কারো মধ্যে চলে আসে না। ধীরে ধীরে এই গুলো নিজের মধ্যে ধারন করতে হয়। আপনাদের হতে এখনও পর্যাপ্ত সময় আছে। আপনারা চাইলেই নিজেকে সেভাবে তৈরি করতে পারেন। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক…..
১. একাডেমিক পড়াশোনায় মনোযোগ দিন:
আপনরা হতে যথেষ্ট সময়। এই সময় একাডেমিক পড়াশোনায় পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। একাডেমিক জ্ঞান আপনাকে বিসিএস লিখিত ও ভাইভা পার করতে সাহায্য করবে। কারণ একাডেমিক জ্ঞান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকলে বিসিএসের ভাইভা বোর্ডে আপনকে চূড়ান্ত অপমান করবে । তাই এখন থেকেই একাডেমিক পড়াশুনায় সিরিয়াস হতে হবে। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি নিচের কাজ গুলো অবশ্যই করুন।
২. বেইসিক স্ট্রং করুন
চাকরি পেতে চাইলে এটা মাস্ট করতেই হবে। বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাস নতুন কোন সিলেবাস নয়। বিসিএস পরীক্ষাটা মূলত ক্লাস ওয়ান থেকে এইচএসসি পর্যন্ত যে পঠিত বিষয়গুলো ছিল সেই বিষয়গুলোর উপর পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা। অর্থাৎ এই বিষয়গুলো যদি আপনি আগে ভালোভাবে পড়া থাকলে আপনার যেকোন চাকরি পাওয়ার জন্য ছয় মাসের প্রস্তুতিই যথেষ্ট। আগে ফাঁকি দিয়ে থাকলে অবশ্যই এই বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে অর্থাৎ স্পষ্ট ধারণা নিতে হবে।
বেসিক স্ট্রং করার সাথে সাথে নিচের কাজগুলো করবেন:
৩. বাংলা সাহিত্যকর্ম:
বিসিএসে যে লেখকদের সাহিত্যকর্ম গুলো বারবার আসে সেই সহিত্যকর্মগুলো বিস্তারিত পড়বেন। অর্থাৎ বিখ্যাত কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প গুলো সময় নিয়ে শেষ করবেন । এগুলো পড়ার জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে । আমি সময়ের ফাঁকে ফাঁকে এগুলো পড়েছিলাম। আমার বিশ্বাস আপনিও এই সময়টুকু পাবেন।
৪. বাংলা ব্যাকরণ শিখুন:
শুধু নবম – দশম শ্রেণির মুনীর চৌধুরীর ব্যাকরণ বইটা মুখস্ত করে ফেলবেন। এই বই থেকেই ৬০/৭০ % প্রশ্ন আসে। তাই কোনো চিন্তা ছাড়া পরে ফেলুন।
৫. ইংরেজি গ্রামার শিখুন:
এখন এসএসসি বা এইচএসসির চৌধুরী অ্যান্ড হোসেন-এর ইংরেজি গ্রামার বই এর গ্রামার গুলো বুঝে বুঝে চর্চা করুন। কোন কিছু না বুঝলে বড় কারো সহায়তা নেন । এটা শেষ করার পরে চাকরি রিলেটেড একটা বই কিনে প্র্যাকটিস করতে থাকুন। অন্যদের থেকে যোজন যোজন এগিয়ে থাকবেন।
৬. গণিত চর্চা করুন:
অনার্সে উঠতে উঠতে অনেকেই গণিত ভুলতে বসে। তাই আবার শুরু করতে হবে । এখন শুধুমাত্র ক্লাস ৬ থেকে ৯ পর্যন্ত গণিতের যে বোর্ড বই গুলো আছে সেগুলো শেষ করবেন। আর কোন কিছু দরকার নেই। গণিতে দক্ষতা ভালো থাকলে চাকরি রিলেটেড যেকোনো একটা বই কিনে চর্চা করুন।
৭. শুদ্ধ বাংলা বলতে শিখুন:
সুন্দরভাবে কথা বলতে পারাটাও একটা আর্ট। বলা হয়ে থাকে, শুধু কথা দিয়ে বিশ্ব জয় করা যায়। তাই শুদ্ধভাবে বাংলায় কথা বলতে শিখুন। সব জায়গায় এটা কাজে লাগবে।
৮. ইংরেজি স্পোকেন শিখুন:
আমাদের দেশে এখনো কেউ একটু ভালোভাবে ইংরেজি বলতে পারলে তাকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হয়। অন্য কোনো যোগ্যতা না থাকলেও শুধুমাত্র ইংরেজিতে সুন্দরভাবে কথা বলার দক্ষতা থাকলে অন্যদের থেকে যোজন যোজন এগিয়ে থাকবেন। আগামী চার বছর পর আপনি যাতে ফ্লুয়েন্টলি ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন এবং এটা করার জন্য যা যা করা দরকার ঠিক তাই করুন। এর জন্য যথেষ্ট সময় দিন।
৯. কাউকে কনভিন্সড করার দক্ষতা:
যেকোনো পরিবেশে এই দক্ষতা আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে রাখবে । এটা ভাইভাতে খুব কাজে দেয়। অনেক চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান মালিক প্রায়ই বলেন, কোন প্রশ্নের উত্তর না পারলেও তার সঠিকভাবে উত্তর করা যায়। অর্থাৎ ভাইভা যিনি নিবেন তাকে কোনভাবে কনভিন্সড করতে পারলে আপনি নিশ্চিত চাকরি পাবেন। শুধু এই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে অনেকেই চাকরি পেয়ে থাকেন। যারা সুন্দরভাবে কথা বলে তাদেরকে ফলো করুন।
১০. ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং:
আপনি চাকরি পাবেন কি পাবেন না লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার পরে তা বলে দেওয়া যায়। অর্থাৎ আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা লিখিত পরীক্ষার উপর নির্ভর করে। লিখিত পরীক্ষায় যে যত ভালো করতে পারবে তার চাকরি পরীক্ষার সম্ভাবনা তত বেশি। লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হলে অবশ্যই আপনাকে ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং এ ভালো হতে হবে। এটা বাংলা ও ইংরেজি উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আর এর জন্য চাই দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি। আপনি যদি ভাবেন রাতারাতি আপনি ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং এ ভালো হয়ে যাবেন তাহলে ভুল করছেন । আপনাকে এর জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে এবং যথেষ্ট সময় দিতে হবে। সারাদিন কি করলেন তা বাংলা ও ইংরেজিতে প্রতিদিন এক পৃষ্ঠা লিখে এই চর্চাটা শুরু করতে পারেন। একমাস পরে আকাশ-পাতাল পার্থক্য লক্ষ্য করবেন। সিরিয়াসলি।
১১. নিয়মিত পত্রিকা পড়ুন:
নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করবেন। এতে করে আপনার ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং এর মান বাড়বে। এছাড়া আপনি সারা বিশ্বের সাথে কানেক্টেড থাকবেন ।
১২. সংবিধান পড়ুন
পারলে সংবিধানের মূল বইটা কিনে পড়ুন। গুরুত্তপূর্ণ ধারা গুলো মুখস্ত করে ফেলুন। সব জায়গায় কাজে লাগবে।
১৩. বিনয়ী ও মানবিক হন
আপনি যেখানেই কাজ করুন না কেন আপনাকে বিনয়ী ও মানবিক হতে হবে। তাই বিনয়ী ও মানবিক হতে শিখুন।
চাকরির বাজারে আসার আগে এই কাজ গুলো শেষ করে আসতে পারলে আপনি যেকোনো চাকরি মাত্র ৫-৬ মাসের প্রস্তুতিতে পাবেন। যারা বড় চাকরি পায় তাদের এই গুন গুলো থাকে। অথবা তারা নিজেকে এই ভাবে তৈরি করে। তাই আপনার স্বপ্ন পূরণ করতে আজ থেকেই এই কাজ গুলো করার চেষ্টা করুন।
সবার জন্য শুভ কমনা রইলো। ধন্যবাদ।
মোঃ তাজ উদ্দিন।
ইউনেস্কো কমিশন (বর্তমান কর্মস্থল)
নরসিংদী সরকারি কলেজ (২৪ তম বিসিএস)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ( ইংরেজি সাহিত্য )
এসএসসি অষ্টম স্টান্ড ( যশোর বোর্ড)
বরিশাল ক্যাডেট কলেজ।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই ওয়েবসাইটের কোনো কনটেন্ট অন্য কোন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা দণ্ডনীয় অপরাধ। ইতিমধ্যে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। কেউ এই ওয়েবসাইটের কনটেন্ট কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দিলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।